ঐতিহ্য ও আধুনিকীকরণের মিশেলে কাশীর নতুন করিডর: সূচনা প্রধানমন্ত্রীর হাতে
খুলে দেওয়া হয়েছে নবনির্মিত করিডর। বহু প্রতীক্ষিত বিশ্বনাথ করিডরের উদ্বোধনে কাশীর ইতিহাস সামনে এনে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কাশীকে ঘিরে থাকা নানা কাহিনী এদিন শোনা যায় মোদীর মুখে। করোনাকালেও থেমে থাকেনি করিডর তৈরির কাজ।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরেই উদ্বোধন হয় নব নির্মিত কাশী বিশ্বনাথ করিডরের।নবনির্মিত কাশী বিশ্বনাথ করিডরের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ”নতুন ইতিহাসের সূচনা হল। এবার সহজে বিশ্বনাথ মন্দিরে আসবেন প্রবীণরা। করিডর দিয়ে সোজা কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে ঢুকে পড়তে পারবেন ভক্তরা।” কাল থেকেই খুলে দেওয়া হয়েছে নবনির্মিত এই করিডর। এদিন বহু প্রতীক্ষিত বিশ্বনাথ করিডরের উদ্বোধনে কাশীর ইতিহাস সামনে এনে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কাশীকে ঘিরে থাকা নানা কাহিনী এদিন শোনা যায় মোদীর মুখে। করোনাকালেও থেমে থাকেনি করিডর তৈরির কাজ। বারাণসী যা উত্তরপ্রদেশ তো বটেই গোটা দেশের হিন্দু ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে এক আলাদা আবেগের কাজ করে ৷ স্বভাবতই এদিনের অনুষ্ঠান ঘিরে সাজসাজ রব ছিল গোটা বারাণসীতে ৷ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-সহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও ৷
সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডর প্রকল্পের ফেজ ওয়ানের উদ্বোধন করলেন। প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৩৩৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এদিন করিডর উদ্বোধনের পাশাপাশি মন্দির কমপ্লেক্স ও মন্দির সংলগ্ন ২৩টি নতুন ভবনেরও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ৫ লক্ষ বর্গফুটের এই নবনির্মিত করিডির দিয়ে এবার বিশ্বনাথ মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া আরও সহজ হবে। এদিন নতুন রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বিশ্বনাথ মন্দিরকে। আজ থেকেই নতুন এই করিডর ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।কাশীতে এদিন বিশ্বনাথ করিডরের উদ্বোধন উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধু-সন্ন্যাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
নরেন্দ্র মোদির এদিনের এই মেগা কর্মসূচি ও মন্দির করিডর উত্তরপ্রদেশে ভোটবাক্সে বিজেপি'কে কতটা সাফল্য এনে দেবে তা সময় বলবে ৷ মন্দির উদ্বোধনের আগে গঙ্গায় নেমে করেছেন স্নান, সেখান থেকে ঘটে করে জল নিয়ে গিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে করেছেন জলাভিষেক প্রধানমন্ত্রী মোদী ৷ দিয়েছেন পুজো ৷ এরপর বক্তৃতায় মোদির মুখে যেমন শোনা গিয়েছে 'হর হর মহাদেব' ধ্বনি, তেমনই শোনা গিয়েছে ভোজপুরি ভাষাও।
করেছেন এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা নির্মাণকর্মীদের প্রশংসাও ৷ অনুষ্ঠানের একফাঁকে নির্মাণকর্মী, সাফাইকর্মীদের কাছে গিয়ে তাঁদের মাথায় পুষ্পবৃষ্টিও করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে ৷ এখানেই শেষ নয় ৷ এদিন কপালে তিলক কেটে কাশী বিশ্বনাথ করিডর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের পাশে বসে দুপুরের খাওয়াও সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ সাধারণের মাঝে এভাবেই এদিন বারবার মিশে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ৷ নিজের গম্ভীর ইমেজের বাইরে বেরিয়ে তাঁকে দেখা গিয়েছে হালকা মেজাজে ৷করেছেন লঞ্চে চেপে গঙ্গা ভ্রমণও ৷ হেঁটে দেখাছেন পুরো কাশী বিশ্বনাথ করিডর ৷ সন্ধায় অংশ নিয়েছেন গঙ্গা আরতিতে ৷
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে দেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি, সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ ও মহাকাশ গবেষণার কথা ৷ সোমনাথ মন্দির, কেদারনাথ মন্দির, অযোধ্যা মন্দিরের পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নির্মাণ, গরিবদের জন্য ঘর তৈরির কথাও শোনা গিয়েছে মোদির মুখে ৷
বহু প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পের উদ্বোধনে এদিন কাশীকে ঘিরে থাকা ইতিহাসের নানা কাহিনীর উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অতীতে বারবার কাশীতে আক্রমণ করা হয়েছে। এদিন সেপ্রসঙ্গে মোদী বলেন, ”এই শহরে (কাশীতে) আক্রমণ করেছে হানাদাররা। ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে! ঔরঙ্গজেবের নৃশংসতার ইতিহাস, তার সন্ত্রাস সাক্ষী। তিনি তরবারি দিয়ে সভ্যতা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন। ধর্মান্ধতা দিয়ে সংস্কৃতিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন! কিন্তু এদেশের মাটি! বাকি বিশ্বের থেকে আলাদা।”
এরই পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, “ঔরঙ্গজেবের প্রসঙ্গ এলে একজন শিবাজীরও প্রসঙ্গ আসে! যদি কোনও সালার মাসুদ এখানে চলে আসে, তাহলে রাজা সুহেলদেবের মতো সাহসী যোদ্ধারা তাকে আমাদের ঐক্যের শক্তি অনুভব করান। এমনকী ব্রিটিশ আমলেও কাশীর মানুষ জানতেন হেস্টিংসের কী হয়েছিল। দেশের স্বাধীনতায় কাশীর গুরুত্ব অপরিসীম। দেশকে একতার সূত্রে বেঁধেছে কাশী। নতুন কাশীর সাক্ষী থেকে আমি গর্বিত, দেশকে উজ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে নয়া কাশী।”
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?