গণতন্ত্রের জয়!
Also read in English
এবারের লোকসভা নির্বাচনের এই ফলাফল সত্যিকারের অর্থে গণতন্ত্রের জয়। ভারতীয় গণতন্ত্রের জয়। কারণ একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখবেন, গতকাল বিকেলে যখন ফলাফলের চিত্রটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তখন কিন্তু দিনের শেষে ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থকরা যেমন উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন, ঠিক তেমনি ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি এবং অন্যান্য ছোট ছোট দলগুলিও কিন্তু তাদের জয় উদযাপন করছিল। এটাই তো গণতন্ত্র। আসলে গণতন্ত্রের জন্য একটা শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ থাকা খুবই জরুরী। একটা মজবুত বিরোধী পক্ষ থাকলে সরকারও কিন্তু ততই শক্তিশালী হবে। আর এই সরকার ও বিরোধী পক্ষের যুগলবন্দীতে লাভবান হবে গণতন্ত্র।
এবার আসা যাক নির্বাচনী ফলাফলের বিশ্লেষণে। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডাক দিয়েছিলেন অব কি বার ৪০০ পার! কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি সেই লক্ষ্য থেকে অনেকটা দূরেই আটকে যায়। আরো একটু খুলে বললে এবার একক সংখ্যা গরিষ্ঠতাই পাইনি বিজেপি। ফলে জোট সঙ্গীদের নিয়েই সরকার গড়তে হবে এন ডি এ কে। এর পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে উত্তর প্রদেশের ফলাফল। সাত দফার ভোট পর্ব শুরু হবার আগেও কিন্তু উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ক্লিন সুইপের কথা বলছিলেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু শেষ দুটি লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার কিন্তু উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি গ্রাউন্ড লেভেলে অনেক বেশি এক্টিভ ছিল। এর মধ্যে এবার কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে অখিলেশ একের পর এক দারুন ক্যাম্পেনিং করেছিলেন। ইউপিতে রাহুল অখিলেশ জুটি কিন্তু সুপার-ডুপার হিট মেরেছে।। আর এই অংকে আটকে গেছে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে রাম মন্দির ইস্যু দিয়ে বাজিমাত করতে চাইছিলেন নরেন্দ্র মোদি, সেই অযোধ্যা তেই হেরে বসে আছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী প্রার্থীর এই উত্থান ভারতীয় রাজনীতিতে এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে এবারের নির্বাচনী ফলাফলে। মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গ নিয়েও দারুন আশাবাদী ছিলেন বিজেপি সমর্থকরা। কিন্তু এই দুটি রাজ্যে ও কিন্তু প্রত্যাশার ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি বিজেপি। এবারের নির্বাচনে অনেক কিছু ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেমন উত্তরপ্রদেশের কথা বললে সেখানকার জাতপাতের রাজনীতি ও বেকারত্ব ইভিএম এ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে দলিতদের অধিকাংশ ভোটই কিন্তু গেছে অখিলেশের পকেটে। আর গোটা দেশের কথা যদি বলা যায় তাহলে একটা ফ্যাক্টর কিন্তু কমন ছিল সেটা হল দ্রব্যমূল্যর বৃদ্ধি। ২০১৪ সালে যে সরকার দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে লাগাম টানবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারাই কিন্তু সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দাম। ২০১৪ আগে স্মৃতি ইরানী কথা সবার মনে আছে। কিভাবে তিনি দিল্লির রাজপথে ৪৫ ডিগ্রি গরমেও তখনকার ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেমেছিলেন। রান্নার গ্যাসের চড়া মূল্যের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেছিলেন স্মৃতিরা। কিন্তু যখন তার দল ক্ষমতায় এলো এবং তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন তখন কিন্তু দ্রব্যমূল্য ইস্যুতে তাকে বারবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি একটি বারের জন্য এ নিয়ে টু শব্দ করেননি। এবার ভোট বাস্কে সেটার ওই জবাব দিয়েছেন সাধারণ জনগণ। একইভাবে আসামেও শুধু ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে ভোটের বৈতরণী পার করে আসছিলেন বদরুদ্দিন আজমল। এবার তাকেও শিক্ষা দিয়েছেন জনগণ।
এই লোকসভা নির্বাচন বেশ কয়েকটি বিষয়ের জন্য ভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষ জায়গা জুড়ে থাকবে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে এক্সিট পোলের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। ফলাফলের ঠিক দুদিন আগে এক্সিট পোলে জাতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, ৩৫০ থেকে ৪৩০ টি সিট পাবে ভারতীয় জনতা পার্টি ও এনডিএ জোট। সবকটা মিডিয়া হাউস বিজেপিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহ চারশোর বেশি সিট দিচ্ছিল। কিন্তু ইভিএম মেশিন খুলতেই দেখা গেল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। ডাহা ফেল হয়েছে এক্সিট পোল। এটাও কিন্তু এবারের নির্বাচনের অন্যতম হাইলাইটস হয়ে থাকবে। এর ফলে এক্সিট পোলের বৈধতা নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনী ফলাফল সত্যিকারের অর্থে আমাদের অনেক কিছু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রশ্নটা হল এই অভিজ্ঞতা থেকে সরকার ও বিরোধী পক্ষ শিক্ষা নেবে তো? ইতিহাস বলছে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না। তবুও দেশের জনগণ আশাবাদী। এটাই গণতন্ত্র।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?