দুর্গাপূজার সময় বরাক বাসীদের সাধারণত ১০ টি কাজ করে থাকে

বিশ্বের প্রতিটি বাঙালি শরৎকালের উৎসব এর জোয়ার এবং এই সময়টাকে সৌহার্দ্যপূর্ণ সময় হিসেবে চিহ্নিত করে। দুর্গাপূজা শুধুমাত্র একটি উৎসব নয় বরং প্রতিটি বাঙালি এবং বরাকবাসীর জন্য আবেগপূর্ণ মুহূর্ত। বরাক উপত্যকার বাঙালি হিন্দু হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। সারা বছর প্রতীক্ষার অবসান বাঙালিদের সবচেয়ে বড় উৎসব শুরু হয় শরৎকালের দুর্গাপূজা মধ্যযুগীয় সময় থাকে উদযাপিত হয়েছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা বিবর্তন সংযোজিত হয়েছে। দুর্গাপূজার সময় আমরা বাঙালিরা কিছু বিশেষ জিনিস করে থাকি তো এবারে দেখে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী?

অক্টোবর 5, 2021 - 18:10
 0

1. মহালায়া

মহালায়া
মহালয়া

মহালয়া দেবীপক্ষের সূচনা এবং পিতৃপক্ষের সমাপ্তি লগ্ন ঘোষণা করে। কথা আছে যে দেবী দুর্গা সন্তানদের নিয়ে কৈলাস পর্বত থেকে মহালয়ার দিনে তার পিতৃগৃহে যাত্রা করেন। ঐদিন সদরঘাট সেতু ও সিদ্ধেশ্বর মন্দির সমস্ত মনোযোগ আকর্ষণ করে। চারিদিকের লোকেরা স্থান পরিদর্শন করে এবং ছবি তোলে টিভি , রেডিও শোনা না হলে যেন এর মাহাত্ম্য সম্পূর্ণ হয় না।

2. কেনাকাটা

কেনাকাটা

পূজা শুরুর অনেকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর কেনাকাটা। মেয়েরা,মায়েরা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখেন কেনাকাটায় ওই সময়। কিন্তু এমন অনেক লোক আছেন যারা শেষ মুহূর্তে কেনাকাটা করে থাকেন।

3. কাশফুল

কাশফুল

শরৎ কালের সবচেয়ে মনোহর দৃশ্য হলো প্রকৃতি।  প্রকৃতির কোলে স্বাদ আকাশের মেলা যেন মনে দোলা লাগায়। জ্যান্ত মা দুর্গা কাশ বন থেকে বেরিয়ে আসছেন এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

4. পরিকল্পনা

পরিকল্পনা

অক্টোবর মাসে পুজো পুজো ভাব পুজো শুরুর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি যে যার মতো করে আনন্দ উৎসবের পরিকল্পনায় মেতে ওঠে।ছোট ছোট জিনিস যেমন জামার সাথে ম্যাচিং গয়না থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য অনেক ছোট ছোট আয়োজন পুজোর আনন্দ দ্বিগুণ করে দেয়।

5. অষ্টমীতে মিশনে যাওয়া

অষ্টমীতে মিশনে যাওয়া

পূজার অষ্টমীতে মিশনে যাওয়া বাধ্যতামূলক পূজার সময় মেয়েরা শাড়িতে নিজেদের সুসজ্জিত করে এবং ছেলেরা পাঞ্জাবিতে নিজেদের মনে প্রাণে।  বাঙালি রূপে মিশনে যায় মা দুর্গাকে অঞ্জলি প্রদান ওই দিনের বিশেষ আকর্ষণ। তারপর শুরু হয় ছবি তোলার পাল।  খিচুড়ির সাথে লাবড়া আমাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে তোলে এবং আমরা যেন বলে ফেলি 'ইস যদি একটা লেবু থাকত লগে তে  জমি গেল নে'।

6. অম্বিকাপট্টির আড্ডা

অম্বিকাপট্টির আড্ডা

বহিরাগত শিল্পীদের গান নাচ আমাদেরকে আমোদিত করে। বিভিন্ন মানুষই অনুষ্ঠানের ঢোল ঢাক বাজিয়ে যোগদান করে। বিভিন্ন ধরনের গান যেমন ভক্তিমূলক গান লোকগান ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষণ ।তরুণ যুবক যুবতীরা একসাথে বসে আড্ডা উপভোগ করে।

7. খাদ্য রসিকদের জন্য স্বর্গ সুখ

খাদ্য রসিকদের জন্য স্বর্গ সুখ

আমরা সবাই খাবার এর স্টলগুলোতে মমো, বিরিয়ানি এবং এগরোল এদিকে বিশেষভাবে নজর দিয়ে থাকি ।এসব খাওয়ার পর আইসক্রিম না খেলে যেন তৃপ্তি হয় না। আইসক্রিম খেয়ে এই ভোজন পর্বের সমাপ্তি ঘোষিত হয়।

8. উধারবন্দ পরিদর্শন

উধারবন্দ পরিদর্শন

উধারবন্দের পূজা পরিদর্শন না করলে যেন পূজা সম্পন্ন হয় না। প্রত্যেক বছর উধারবন্দের অতুলনীয় প্যান্ডেল সবার নজর কাড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে উধারবন্দের পূজা পরিদর্শন করে । শুধুমাত্র বরাক উপত্যকা না অন্যান্য রাজ্যগুলো থেকেও অনেক মানুষ নজরকাড়া প্যান্ডেল দেখতে আসেন।

9. প্রতিযোগিতা

প্রতিযোগিতা

নবমীতে পূজা কমিটিগুলো নানা ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করে থাকে। যেমন ধুনুচি নাচ, শঙ্খধ্বনি, উলু ধ্বনি  ধামাইল নৃত্য ইত্যাদি।

10. সিঁদুর খেলা এবং দশমী

সিঁদুর খেলা এবং দশমী

প্রথমে মহিলারা দেবীকে বরণ করেন যেখানে বিবাহিত নারীরা দেবী কে বিদায় জানান, তারপর মহিলা রা একে অন্যকে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন।বরাক বাসীরা বরাক পারে বিসর্জনের জন্য যান। বিসর্জন যাত্রা সময় মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রার সময় যে নাচ সেটা আলাদা তৃপ্তি প্রদান করে। ওই সময়টা সবচাইতে আবেগপ্রবণ মুহূর্ত আমাদের জন্য কারণ আরও এক বছরের প্রতীক্ষা। এক বছর পর আবার নিজের ঘরে ফিরবেন তাই

এমন অনেক কাজ আমরা করে থাকি পুজোর সময় যেমন ভোর পাঁচটায় বাড়ি ফিরে আবার সকাল  ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে অঞ্জলি দিতে যাওয়া কোনভাবেই কষ্টকর বলে মনে হয়না । সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় স্ট্যাটাস দেওয়া - পুজো পুজো ভাব , অপেক্ষার  অবসান হয়না, অপেক্ষার আর মাত্র কটা দিন, মা আসছেন এসব যেন বাধ্যতামূলক।

এই ছোট ছোট বিষয়গুলো বাঙালিরা পুজোর সময় করে থাকে । ঢাকের আওয়াজ যেন আমাদের মনে আলাদা শক্তি সঞ্চার করে এবং আমরা আবারও এক বছর অপেক্ষা করে থাকি । এই সম্পূর্ণ উদ্যম এবং উদ্দীপনা নিয়ে এই বৃহৎ উৎসবের জন্য।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow