বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য সরাসরি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর হাতে একগুচ্ছ দাবি তুলে দেওয়া হল নাগরিক মঞ্চের পক্ষে
বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য সরাসরি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর হাতে একগুচ্ছ দাবি তুলে দেওয়া হল নাগরিক মঞ্চের পক্ষে
২২ ফেব্রুয়ারি, ভিশন এস ২৫ শিলচর, নাগরিক মঞ্চের পক্ষ থেকে অন্যতম আহ্বায়ক রসরাজ দাস গুয়াহাটিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর হাতে সরাসরি তুলে দিলেন শিলচরের সামগ্রিক উন্নয়ন বিষয়ক একগুচ্ছ দাবি প্রস্তাব। আসন্ন বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য অনুরোধ করলেন, নাগরিক মঞ্চের পক্ষ থেকে। শিলচরকে আধুনিক মানের উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই মেমোরেন্ডাম। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যেও জমা দেন একই দাবি পত্র। প্রতিটি দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বোধে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ যেন রাখা হয় এইবারের আগত বাজেট অধিবেশনে, এই অনুরোধ রেখেছেন মঞ্চের পক্ষ থেকে। পাঠকের সুবিধার্থে গুচ্ছ প্রস্তাব গুলি অতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
শিলচরের বিস্তার, সৌন্দর্যায়ন ও যোগাযোগব্যবস্থা এই শিরোনামের অধীনে বলা হয়েছে, শিলচরের প্রয়োজনীয় বিস্তার ঘটিয়ে কর্পোরেশনে উন্নীত করা হোক এবং কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন তারিখ ধার্য করা হোক। হোক প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ। গুয়াহাটির পর শিলচর যেহেতু দ্বিতীয় কর্পোরেশন হতে যাচ্ছে তাই সরকারের ইউ.আই.ডি.এফ তহবিলের একটি বড় অংশ যেন আগে থেকেই শিলচরের সৌন্দর্যায়ন সবুজায়ন পরিষ্কার পরিছন্নতা ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রভৃতির জন্য সংরক্ষিত করে রাখা হয়। কর্পোরেশন বোর্ড গঠন হয়ে যাবার পর পুনরায় পর্যাপ্ত আর্থিক প্যাকেজের জন্যও আগাম অনুরোধ করা হয়। সৌন্দর্যায়নের বিষয়ে বলা হয়েছে, শিলচরের সবগুলো মুখ্য রাস্তা ও পাড়া অলি গলির প্রতিটি রাস্তাকে যথেষ্ট প্রশস্ত ও আধুনিকমানের করে তোলা, এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দাবি করেছেন।
শিলচরের বিভিন্ন স্থানে মাল্টি স্টোরিড পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা, শিলচরের ব্লক বসানো রাস্তা গুলোর অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে দিনের পর দিন তাই সবগুলো রাস্তাকে উন্নত পাকা রাস্তায় উন্নীত করা। ট্রাফিক ড্রেইনেজ ওয়াটার লগইন প্রভৃতি জ্বলন্ত সমস্যা সুষ্ঠু সমাধান চান নাগরিকেরা, তাই নাগরিক মঞ্চ আশা করেন, আসন্ন বাজেটে এই সমস্যা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ রাখা হবে। তারা অনুরোধ রেখেছেন, শিলচরে বহু চর্চিত ফ্লাইওভার, এলিভেটর যুক্ত সুন্দর ফুটব্রিজ, স্মর্টলুক ফুটপাত, একাধিক ফ্লাইওভার, ওভার ব্রিজ ইত্যাদি বানানোর কাজ যেন অতিসত্বর হাতে নেওয়া হয়। রাঙ্গিড়খারী থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত চার লেনের রাস্তার কাজ অতিসত্বর সম্পূর্ণ করা। শিলচরে রিং-রোড বানানোর পরিকল্পনা দ্রুত সম্পূর্ণ করা। বাজেট অধিবেশনে এই বিষয়গুলোর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেন প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ রাখা হয়। সবগুলো অসম্পূর্ণ ব্রিজ ও প্যাসেজ সম্পূর্ণ করার বিষয়ও উল্লেখ করেছেন। সরকারের কাছে দাবি পত্রে আর্জি রাখা হয়, পুরো শিলচর জুড়ে যেন হয় সবুজায়ন, রাস্তার দু-পাশে এবং ডিভাইডার জুড়ে যেন থাকে রকমারি গাছ ও ফুলের বাহার , তারা অনুরোধ করেছেন, বরাক নদীর তীরকে দেয়া হোক পর্যটন চেহারা, চাইছেন বাজেট বরাদ্দ। শিলচরের দীর্ঘদিনের জমা জল নিষ্কাশন এর সমস্যা ও ড্রেনেজ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য চাইছেন প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ। প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন জায়গায় ওয়াটার এটিএম তৈরি করা এবং স্যানিটাইজেশনের উন্নতির জন্য বায়ো টয়লেট স্থাপন করার বিষয়েও বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন। তারা আরো বলেছেন, শিলচরের প্রতিটি মূল সড়ক এবং অলিগলিতে পর্যাপ্ত স্ট্রীট লাইটের ব্যবস্থা করে পুরো সিটিকে আলোকিত করে তোলা, এর জন্য চেয়েছেন প্রয়োজন বাজেট বরাদ্দ। সমস্ত জলাশয়কে পরিষ্কার করে তোলা এবং তাকে বিভিন্ন রূপ দেয়া। শিলচর কে স্মার্ট সিটি বানানোর লক্ষ্যে স্মার্ট সিটি গাইড লাইন মেনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দেবার জন্য, স্মার্টসিটি প্রপোজাল তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ যেন রাখা হয় এই বাজেট অধিবেশনে। শিল্পায়ন শিরোনামের অধীনে বলা হয়েছে, সমগ্র শিলচর কাছাড় ও বরাক জুড়ে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট ল্যান্ড ব্যাংক বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ চাইছেন নাগরিক মঞ্চ । ছোট, ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা, উৎসাহিত করা ও বাস্তবে রূপান্তর করার জন্য শিলচরে অবস্থিত এম এস এম ই অফিসকেও যেনো গোটা প্রক্রিয়ার সাথে জরানো হয়। তারা দাবি পত্রে উল্লেখ করেছেন, শিলচরে হোক আই.টি পার্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। সরকারের উদ্যোগে 'স্টার্ট আপ' ব্যবসার প্রভূত বিস্তার ঘটুক শিলচর এবং বরাক জুড়ে। শিলচরে হোক আসাম স্টার্টআপ 'দি নেস্টের' স্থানীয় অফিস, চাইছেন প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ।
তাতে নব প্রজন্মের যেমন কাজের সুযোগ ঘটবে তেমনি রাজস্বও বৃদ্ধি ঘটবে এবং আসামের উন্নয়নেও এর প্রভাব ফুটে উঠবে। শিলচরের নব প্রজন্মের ছেলেমেয়েদেরকে আর কাজের জন্য শিলচর ছেড়ে বাইরে যেতে হবে না এবং শিলচরও বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত হবে না। নাগরিক ফোরাম চায় শিলচরের বরাকের ছেলে মেয়েরা যেন 'আইপিএস', 'আইএস' ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি বিভিন্ন জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনায়াসে ক্র্যাক করতে পারে এবং তার জন্য শিলচরে কোটার মতো কোচিং সেন্টার শুভ উদ্বোধন চাইছেন এই এপ্রিল থেকেই, এর জন্যও প্রয়োজনবোধে বাজেট বরাদ্দ রাখার অনুরোধ করেছেন। প্রসঙ্গত, বিগত ডিব্রুগড় ক্যাবিনেট মিটিং এর পর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন শিলচরেও অতিস ত্বর খোলা হবে কোটার মত কোচিং সেন্টার। সরকারি উদ্যোগ এবং উৎসাহে শিলচর এর আশেপাশে জাতীয় মানের ইন্টিগ্রেটেড বিনোদন পার্ক চাওয়া হয়, যেখানে থাকবে লেইক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ফুলবাগান, জিপলাইন প্রভৃতি সবকিছু যা সমগ্র বরাক তথা আশেপাশের রাজ্যের পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। শিলচরে দীর্ঘদিনের পুরনো সরকারি স্কুল, কলেজ এবং অফিস বিল্ডিং এর নবীকরণ উন্নয়ন ও অলংকরণের দাবি রাখা হয়, এসবের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ আশা করছেন আগত অধিবেশনে। বন্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ চাইছেন এই অধিবেশনে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক এজেন্ডায় ফিরে এসে লিখেছেন, শিলচর মেডিকেল কলেজে যেন অতিসত্বর আধুনিক মানের নিউরো ওটি তৈরি করা হয়, মেডিকেল কলেজ কে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বানানোর সিভিল ওয়ার্ক যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ করে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কাজকর্ম যেন শুরু করে দেওয়া যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাত দেখতে চাইছেন নাগরিকরা আগত অধিবেশনে। পালমোনোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট, ইউরোলজিস্ট প্রভৃতি সুপার স্পেশালিটি ডাক্তারের অ্যাপয়নমেন্টও দাবি করা হয়। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার আগ অব্দি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি ওপিডি চালুরও সুপারিশ করেন। তারা মনে করিয়ে দেন, শিলচর সিভিল হাসপাতালকে প্রস্তাবিত আধুনিক মানের ৩০০ শয্যার হস্পিটালে উন্নীত করার কাজ অবিলম্বে শুরু করানো উচিত এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দাবি করেছেন। কাছাড় তথা সমগ্র গ্রাম বরাকের সবগুলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র কে প্রয়োজনীয় উন্নতি করা। সংস্কৃতি ও ক্রীড়া শিরোনামের অধীনে তারা লিখেছেন, ইন্টিগ্রেটেড স্পোর্টস কমপ্লেক্স, ইউথ হোস্টেল প্রভৃতির জন্য বাজেট বরাদ্দ। প্রস্তাবিত স্বামী বিবেকানন্দ কালচারাল কমপ্লেক্স ও রিসার্চ সেন্টারের কাজ শুরু করার জন্য চাইছেন বাজেটে বরাদ্দ । প্রস্তাবিত মিউজিয়াম এর কাজ সম্পূর্ণ করা, সরকারের হাতে নেয়া জেলা গ্রন্থাগার ভবনের কাজ শেষ করা, ইত্যাদি বিষয় সরকারকে সবিনয়ে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে, এবং প্রয়োজনবোধে আগত অধিবেশনে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। পর্যটন শিল্প এই শিরোনামের অধীনে তারা দাবি রেখেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া চিড়িয়াখানার কাজ যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা, খাসপুরে প্রস্তাবিত টুরিস্ট কম্প্লেক্স বানানোর কাজ শুরু করা, প্রস্তাবিত ভুবন তীর্থ উন্নয়নের কাজ সম্পূর্ণ করা এবং বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা। এছাড়াও সরকারের হাতে থাকা অন্যান্য প্রকল্প তথা আরো কি কি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় তা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের পথে দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও বাজেট অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ করেছেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই অসমের দ্বিতীয় জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তর শিলচর তথা কাছাড় ও সমগ্র বরাক উপত্যকাকে উন্নতির চরম শিখরে দেখতে চান প্রবীণ ও নবীন প্রজন্ম, এমনটাই বলেছেন রসরাজবাবুরা।
নাগরিক মঞ্চের পক্ষে রসরাজ দাস, শ্রীকান্ত ভট্টাচার্য, পিনাকপানি নাথ প্রমূখ প্রেসবার্তায় এই খবর জানিয়েছেন। ২৩/০২/২৩।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?