মিট দ্য লেডি বিহাইন্ড দ্য রিনোভেশন অব শিলচর সিভিল হসপিটাল।
সাধারণত যখন আমরা হাসপাতালের কথা বলি চেহারা এবং অনুভূতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শিলচর সিভিল হাসপাতালের ক্ষেত্রে এটি দৃশ্যকল্প ছিল না। তাই, জন্মভূমির একজন ভদ্রমহিলা দৃশ্যপট পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। সম্পূর্ণ গল্প পড়ুন.
লিখেছেন- অনিন্দিতা কর
হাসপাতাল নামটা শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে সাদা দেয়াল, সবুজ পর্দা, একাংশ রোগী, ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের বিচরণ ভূমি। কিন্তু এবারে এই ভোল পাল্টানোর ভার কাঁধে নিয়ে তাই তো নবরূপে সজ্জিত করার চিন্তাধারাকে বাস্তবে রূপায়িত করলেন একজন মহিলা যার নাম ডঃ সোমভা দত্ত। বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে এসে নিজের পড়াশোনা, পেশার পাশাপাশি নিজের শিল্প গুণে সমৃদ্ধ করতে চাইছেন আশেপাশের সমস্ত কিছুকে। সোমভা বর্তমানে শিলচর টিটিই কলেজে গেস্ট লেকচারার হিসেবে কর্মরত এবং তিনি একজন ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট।
শিলচর সিভিল হসপিটালে তিনি নিজের কারুকার্যের সাক্ষর রেখেছেন৷ যে ভবে সাজিয়ে তুলেছেন হাসপাতালকে তা ভাবনার অতীত। এনআরসি শব্দটাকে নবীকরণ করার নতুন প্রকল্পের অধীনে পেইন্টিং বিভগে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন সোমভা। সুযোগের সদ্ ব্যবহার করে সেটাকে কাজে লাগিয়ে তিনি হাসপাতালের দেওয়ালগুলোকে সুসজ্জিত করার প্রয়াসে ত্রুটি রাখেননি তিনি।
হাসপাতালের দেয়ালগুলো মেরামত করার পর শুরু হল রঙের কাজ। একা হাতে সমস্ত কারুকার্য করেছেন তিনি।
যদিও তিনি স্পেশিয়েলাইজেশন করেছেন বুনন শিল্পের ওপর। কিন্তু বিশ্বভারতীতে পড়া কালীন বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার সুবাদে তার বিশেষ কোনও অসুবিধে হয় নি এ ধরনের কাজ করতে।
সিভিল হাসপাতালে কাজ করার সময় তাঁর মাথায় ছিল যে হাসপাতালে নবজাতক থেকে শুরু করে বওভিন্ন বয়সের শিশু,কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই আসেন। তবে, বাচ্চাদের মনে হাসপাতাল শুনলেই এটা ভয় বা ভীতি জন্মায়। তাই তিনি ভাবলেন যদি এমন কিছু করা যায় যাতে এখানে এসে তাদের মনে না হয় যে এটা একটা ভয়ের জায়গা। তিনি দেওয়ালে এমন কিছু করতে চান বা তুলে ধরতে চান যাতে তারা এইসব দেখে ভুলে থাকতে পারে। তাই তিনি দেয়ালের মধ্যে বিভিন্ন বর্ণমালা, ফল-ফুলের ছবি,, কার্টুন, গাছ, লতা-পাতা তার সঙ্গে হাসপাতালের নির্ধারিত কিছু ছবি ও সচেতনতাপূর্ণ বার্তা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন। যাতে বদচ্চাদের বা বড়দের মনেও বিরক্তি ভাব না আসে।
প্রথমে সবাই উনাকে বাঁধা দিতে চাইলেও উনার যুক্তি ও কথা শুনে সবাই ভরসা করতে বাধ্য হয় এবং তিনি নিজের ভাবনাকে হাসপাতালের দেয়ালে রঙ-তুলির সাহায্যে তুলে ধরে , নিজেকে প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছেন।
সোমভার মনে এই চিন্তাই কাজ করছিল যাতে এই ছবিগুলো দেখে অসুস্থ, মুমূর্ষ মানুষের মনেও যাতে প্রাণ সঞ্চার হয়। তার বিশ্বাস, " মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে। "
তিনি একাই এই পেইন্টিংয়ের কাজ করেছেন। মোট পাঁচদিন সময়ে এই কাজ শেষ করেছেন। যেহেতু হাসপাতালের পুনঃসংস্কারিত এই ভবনের উদ্বোধনের দিন ঘনিয়ে আসছিল তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই কাজ শেষ করতে হয়েছে এবং যথা সময়ে কাজ শেষ করেছেন।
একজন শিল্পীর শিল্পই হচ্ছে তাঁর প্রতিভা, শিল্প সত্তা প্রকাশের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। একজন মহিলা যে নিজের কর্ম দক্ষতা, কর্মক্ষমতা দিয়ে শিলচর সিভিল হাসপাতালের এমন এক কর্মযজ্ঞে নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নিজের ভাবনাকে রূপায়িত করার কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি হলেন ডঃ সোমভা দত্ত।
এই মহিলার ভাবনা এবং তার রূপায়িত করার প্রচেষ্টা সত্যি আমাদের নজর কেড়ে নেয়। তাঁর এই কাজের জন্য তাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। মেয়েরা শুধুমাত্র ঘর সাজাতেই অভিজ্ঞ নয়, তারা ঘরে - বাইরে দুই ক্ষেত্রেই নিজের ক্ষমতায়, নিজের কাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠা দিতে পারে তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ এই মহিলা। যিনি নিজের ভাবন-চিন্তাকে বাস্তবায়িত করেছেল নিজের তুলির আঁচড়ে এবং তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে শিলচর সিভিল হাসপাতাল নবরূপে সুসজ্জিত হয়ে উঠেছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?